# এক
মারা গেলে তোমারা মোমবাতির মিছিলে নেমো না। জ্বলন্ত উনুনে হৃদপিণ্ড পুড়েই হয়তো মৃত্যু হবে। সে খবর কি কেউ রাখবে? কয়েক হাজার মোমবাতির আগুন হৃদপিণ্ড ঝলসানো আগুনের কাছে কিছুই না। তারচেয়ে বরং বেঁচে থাকতে কাছে এসো, পাশে বসে হাতটা ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে থেকো। ভালোবেসে মাথা গুঁজে নিও তোমার বুকে। চুলে দিও হাত বুলিয়ে। গালে বুলিয়ে দিও তোমার আঙ্গুল গুলো।
# দুই
ঘড়িতে সময় প্রচন্ড খারাপ, সূর্য আলো দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চাঁদও। বায়ুমন্ডলে নেই আগের মত নির্মল বাতাস। চারদিকে অনিমেষ অন্ধকার। আকাশে এখন আর পাখি উড়ে না। উড়তে থাকা চিলের ছায়ায় চোর বাজারে তোমার মনের সওদা হয়ে গেছে। নিগূঢ় কালো চোখের কাজলের ব্যক্তিগত মায়ার অভিশাপ নিয়ে ঘুরছি। আর কখনও করবো না বিপ্লব। জীবন ধ্বংসের মত সুন্দর। প্রেমের নগরের কারফিউ জারি হয়েছে। দুয়ার খুলে পা বাড়ালেই ক্রসফায়ার, মস্তক বরাবর। আমি সিদ্ধান্তঃ নিয়েছি আর কখনও বিপ্লব করবো না, এমনকি কোনো বিপ্লবের স্বপ্নও দেখবো না কিংবা অংশগ্রহণ।
# তিন
ঘুম হয়না পঁয়ত্রিশ কোটি বছর। নিঃস্তব্ধতার সাথে সওদা করেছি, তবুও তোমার সাথে আপোষের রাজনীতি আমি পারবো না। নক্ষত্রগুলো মহাকর্ষীয় সূত্র ধরে আমাকে প্রদর্শন করে তোমার স্মৃতিগুলো। বুকের ভিতর আস্ত হিরোশিমা-নাগাসাকি শহর নিয়ে দাড়িয়ে আছি মহাজাগতিক প্রান্তে। এটমিক বোমা পিন্ড এসে আছরে পরে আমার মেরুদণ্ড বরাবর। এ যুদ্ধ থামবেনা আমার শরীর নিথর হওয়ার আগ পর্যন্ত। বন্দুকের নলের সামনে রাখা কাঠগোলাপ গুলো ছদ্মবেশে ঝাঁঝরা করে দিবে আমার গোটা শরীর। তুমি অবলীলায় হেঁটে যাবে আমার কবরের ওপর দিয়ে, হয়তো না জেনেই।
# চার
তুমি জানলে অবাক হবে, আমি কেবল বসন্তের কোকিলের মত মন খুলে গান গাওয়ার মত সুখী হতে চেয়েছিলাম। আমি কেবল ময়ূরের পেখম তুলে নাচার মত সুখী হতে চেয়েছিলাম। আমি কেবল জানালা দিয়ে আসা মিষ্টি রোদে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত বিড়ালটির মত সুখী হতে চেয়েছিলাম। আমি কেবল পাল তোলো নৌকার নির্দিষ্ট ঘাটে পৌঁছানোর মত সুখী হতে চেয়েছিলাম। আমি কেবল ফাল্গুনে গাছের নতুন পাতার আগমনের মত সুখী হতে চেয়েছিলাম।
তুমি বুঝলে না, জানলে না, শুনলে না যকৃৎ-এর আর্তচিৎকার।
# এক
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটার হৃদয়ে নিজের অজান্তেই প্রণয়ের সৃষ্টি হলো, একটা ফ্রক পরা, চোখে গাঢ় কালো কাজল মাখা একটা অষ্টম শ্রেণির মেয়ে'কে দেখে। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি মৃদু হাসির স্পর্শ, মাথায় তার সহস্র কোটি চুলের সরু বেণি।
কোচিং ফাঁকি দিয়ে, ছেলেটা প্রতিটা দিন মেয়ের কোচিং এর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়, কোনো এক দূর্লভ মুহূর্তে এক চামচ দেখা মিলবে তার। দক্ষিণা বাতাসে কপালের সামনে পরে থাকা গোটা খানেক চুল উড়বে। এতটুকুই তো চাওয়া, তাতেই ছেলেটার রাতের ঘুম শেষ। সারারাত না ঘুমিয়ে এপাশ - ওপাশ করবে আর ভাবছে মেয়েটির কথা। কিভাবে তার সামনে গিয়ে বলা যায়, তার হৃদয়ের অতৃপ্ত, অব্যক্ত শব্দের বাক্য গুলো।
অথচ, ছেলেটার ফিজিক্স বই এখনও নতুন, জমে আছে ভূরি ভূরি বায়োলজি'র এসাইনমেন্ট। অংকের প্রতিটা শিরা-উপশিরা ভূলে ভরা। ইংরেজি লিখতে বা বলতে গেলে নতুন এক অক্সফোর্ড ডিকশনারী তৈরী করা যায়।
# দুই
দিন যেতে থাকে। ছেলেটা সেই মেয়েটার পিছনে আঠার মত লেগে থাকে, কোনো একদিন মেয়েটিরও ভালো লাগবে ছেলেটাকে সেই আশায়।
নাকের নিচে সদ্য গোঁফের রেখা গজানো, এলোমেলো চুলের, শার্টের বোতাম খোলা বালককে মনে হবে এ মহাবিশ্বের সব চেয়ে সুদর্শন পুরুষ। মেয়েটি কলমের ক্যাপ কামড়িয়ে বাঁকা করে ফেলবে। পড়ার টেবিলে তো মন বসবে না পৃথিবী উল্টো হয়ে গেলেও।
# তিন
একদিন দুজনে মুখোমুখি দাঁড়ায়।
কিছুক্ষণ এর জন্য বৃষ্টি শুরু হয়, মহাজাগতিক নিরবতার!
ছেলেটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শত কোটি সহস্রবার রিহার্সাল দিয়ে আসা কথা গুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে তোতলানো শব্দ কতকিছুই বলে, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি। ছেলেটা প্রচুর নার্ভাস ফিল করে।
মেয়েটি এসব লক্ষ করে, পুরো বিষয়টা বুঝে ফেলে। ছেলেটা আসলে কি বলতে চায় তাকে। ছেলেটার এই করুণ অবস্থা দেখে, মেয়েটি তার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় মিষ্টি মৃদু এক চিমটি হাসি লেপ্টে রেখে কঠিন স্বরে বলে -
“ এই ছেলে ভয় পাচ্ছো কেনো? আজব!
আমি বাঘ নাকি ভল্লুক? তোমাকে কি কামর দিবো? ”
ছেলেটা আরো নার্ভাস হয়ে যায়। তার সাথে একটু বিস্মিতও হয়, জুনিয়র একটা মেয়ে এভাবে কথা বলতেছে কেনো। মনে হচ্ছে আমি ওর থেকে ছোট্ট! ছেলেটার এই বেহাল অবস্থা দেখে, মেয়েটি তার হাসি আর থামিয়ে রাখতে পারে না। সে অট্টহাসি হেসে ফেলে। অট্টহাসি হলেও যথেষ্ট মিষ্টি ছিলো, হৃদয় শীতল করার জন্য।
# চার
~ to be continued...